বাবা,মা আর তাদের দুটি শিশুসন্তান আমেরিকার ক্যালিফোর্ণিয়া স্টেটের একটি বেশ জমজমাট শহর থেকে একটি বড় গাড়ীতে চড়ে ছুটি কাটাতে যাচ্ছিলো প্রশান্ত মহাসাগরের পাড়ে একটি ছোট্ট সমুদ্রসৈকতে। যদিও প্রশান্ত মহাসাগরে প্রখর গ্রীষ্মেও শৈত্যপ্রবাহ হয়। ভয়ঙ্কর ঠান্ডা থাকে এই দিকে সমুদ্রের জল বছরের

মাঝখানে ন’টা দিন কেটে গেছে বৃষ্টি, তুষারপাত আমাদের এই পাহাড়ঘেরা ছোট্ট শহরটাতে একটা ঘুম ঘুম ভাব এনে দিয়েছিলো। খবরের কাগজে এই খবরটা পড়ে শহরের ঘুম গেলো ভেঙে। ৩৪বছরের বাবা, ৩০বছরের মা, ৪বছর আর ৭ মাস বয়েসের দুটি শিশুকন্যা- তারা হারিয়ে গেছে আমাদেরই শহরের খুব কাছাকাছি জঙ্গলে, পাহাড়ে, বরফের রাজ্যে। এ পাহাড়ে জংলী জানোয়ারের’ও অভাব নেই। আছে কুগার(পুমা), ভাল্লুক- এ সবের মত হিংস্র প্রানী’ও। চারদিন চারটি দলের অক্লান্ত খোঁজাখুজির পরে পাওয়া গেলো মা আর তাদের সন্তানদের। ক্ষুধায়, তৃষ্ণায়, শীতে, ক্লান্তিতে আর দুঃশ্চিন্তায় বিপন্ন, অসুস্থ । কিন্তু বাবা?
ন’দিন ক্রমাগত মা তার বাচ্চাদের বুকের দুধ পান করিয়েছেন। গাড়ীতে পেট্রোল ফুরিয়ে যাওয়াতে গাড়ীর হিটার আর চালানো সম্ভব হয়নি। তারা পুড়িয়েছেন গাড়ীর টায়ার, বাক্সবন্দী জামাকাপড় একটু উষ্ণতার জন্য। যখন বিকেল চারটের সময়ে শহরে নেমে আসে রাত্রি। সমস্তটা দিন দেখা পাওয়া যায় না সূর্য্যদেবের,শহরের মধ্যেই দিনের বেলাতে ঘন কুয়াশার জন্য দেখতে পাওয়া যায় না কিচ্ছু-তবে বরফে ঘেরা জঙ্গলে কি অবস্থার মধ্যে কাটিয়েছিলো এই পরিবার ওই সাতটি দিন!
।।২।।
সপ্তম দিনে বাবা জেমস্ কিম তার স্ত্রী ও সন্তানদের ছেড়ে ভোরবেলা দুটি লাইটার সঙ্গী করে বেড়িয়েছিলেন খাদ্য ও জলের খোঁজে। তার পরনে ছিলো জিনসের প্যান্ট,টেনিস শ্যু, সোয়েটার ও একটি জ্যাকেট। জেমস্ দু’দিন পরেও তার গাড়ীতে ফিরে আসতে পারেন নি। মা ও তার সন্তানদের নিয়ে আসা হয় আমাদেরই শহরে। কিন্তু কোথায় গেলেন জেমস্!!স্যান-ফ্রান্সিসকো’র CNET-এর সিনিয়র এডিটর কি তবে হারিয়ে গেলেন ‘ওয়াইল্ড অরেগনে’র বরফঘেরা পাহাড়ী জঙ্গল!
কোনদিন কি স্যাবিন আর পেনেলোপ তাদের বাবাকে ফিরে পাবে?

দুদিন পরে উদ্ধারকারী দল জেমসের মৃতদেহ খুঁজে পান একটি বড় খালের নর্দমায়।প্রচন্ড তুষার ঝড়ে তার দেহটি এসে পড়েছে ওই নর্দমাতে। এই মর্মান্তিক ঘটনা কেনো ঘটলো! যে পথে এমন অশুভ নিয়তি ভেঙে দিতে পারে সোনার সংসার, কেড়ে নিতে পারে দুধের শিশুদের সবচেয়ে বড় নিরাপত্তার হাত-সে পথ বন্ধ হয়ে যায় না কেনো?? বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশেও কেনো ঘটে এমন ঘটনা!!
জানি না পৃথিবীতে কত দেশে প্রতিদিন এভাবে কত না মানুষ হারিয়ে যান তাদের প্রিয়জনেদের কাছ থেকে তার হিসেব কেউ রাখে না । সবাই ধীরে ধীরে ভুলে যায় তাদের কথা। কিন্তু আজ এই ঘটনার পরে একটা উপলব্ধিই হচ্ছে; কোথায়, কখন, কিভাবে যে চলে যেতে হবে-তা আগে থেকে কেউ জানে না। একটু উষ্ণতার জন্য, সন্তানদের মুখে একটু খাবার তুলে দেবার জন্য স্যানফ্রান্সিসকো’র উচ্চপদস্থ কর্মীটিকেও দিয়ে দিতে হল নিজের জীবন। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, এরকম মৃত্যু তিনি যেনো আর কোনো জন্মদাতাকে না দেন ।।
ছবি সৌজন্য: ইন্টারনেট

লেখিকা : শ্রদ্ধা পত্রনবীশ
অরেগন, উত্তর আমেরিকা
(ডিসেম্বর,২০০৬)
6 comments:
mormosporshi lekha...
Ghotonati khoborer kagoje porechhi...porHe abar kore mon ta bhari hoye uthlo...
vison bhabe mon ke chhuye gelo Sraddha...tomar dairy r pata ta...
ha sotti ei ghotona ta amader sobaike nara diechilo...somoyer srote amra sobai sob bhule gechilam ....abar tumi mone korie dile.
tomar ei marmaantik lekhati pore gaye kaNta dichhe. sudhu tai noy bachhaduti o tar mayeder jonye mon ta khub-i kharap hoye gelo. mangalmoy-r kachhe prarthona janai oder shakti dite jate bhalobhabe ei prithibite baNchte pare.
esob ghotona sune /pore mone hoi bhogoban kono kono somoy bhison nisthur hoe jan.
oi family anondo korte gie keno ei bipode porlen bolo?
Post a Comment